Monday, April 7, 2008

আমি স্বপ্নবিলাসী


ছাড়া ছাড়া পরস্পর সম্পর্কহীন কতগুলো স্বপ্ন

অগোছালো স্বপ্নগুলো হৃদয়ের শূন্য প্রান্তরে

আপন অভিসারে ঘুরেফিরে,

আর আমি স্বপ্নকে সাথী করে

আমার একান্ত সময়গুলো কাটিয়ে দিই


স্বপ্নের পাখায় ভর করে পাড়ি দেই দূর দিগন্তে,

যেখানে নেই খররোদ

শুধুই অবিরাম বর্ষণ।

যেখানে দুঃখেরা বৃষ্টির সাথে ধুয়ে যায়

যেখানে সুখের বন্যায় উদাসী মন ভেসে বেড়ায়।


আমি দুঃখকে ভুলে থাকি

স্বপ্নকে ঘিরে সুখের কল্পনায়

কারণ, আমি স্বপ্নবিলাসী।


০৩-মে ২০০৩

আনন্দময়ী


আর কত শোনাবে তুমি দুঃখের ভৈরবী ?

আমি তো শুনতে চাই ট্রাম্পেটে উৎসবের সুর ।

অথবা তোমার মুক্তোঝরা কণ্ঠে-

আশার বাণী, বসন্তের গান কিংবা

অনাগত সুখে ঝলসানো সব দিনের কথা ।


একি! তুমি গাইছ ঘুম পাড়ানিয়া গান!

আমিতো ঘুমুতে আসিনি এখানে-

এই তোমার কাছে । বড় নিদ্রাক্লান্ত আমি

আমি এসেছি তুমি জাগাবে বলে-

তোমার ঠোঁটের উষ্ণতা দিয়ে, বুকের উত্তাপ দিয়ে ।


আমিতো দুঃখবিলাসী হতে চাই না ।

চাই না মৃত্যুসম অনন্ত শীতনিদ্রা ।

আমি তোমার কপোলে অশ্রুবিন্দু দেখতে চাই না ।

আমি সুখস্বপ্ন দেখতে চাই- সুখে মাতাল হতে চাই-

আমি উষ্ণতা চাই- দেবেনা তুমি, হে আনন্দময়ী !!!


সেপ্টেম্বর ২০০৬

দলছুট মন


নিঃসঙ্গ মন উড়ে যায় দূরে- অনেক দূরে

যেখানে নেই কেউ

শূন্যতা, শুধুই শূন্যতা- সেখানে ।


উড়ে যায় ডানা মেলে

খসে পড়ে সাদা কালো পালক

নিচে, অনেক নিচে ।

সেখানে অনেকেই আছে

পালক দেখে তারা চিনে ফেলে

এ যে দলছুট মনের পালক

যে কিনা উড়ে গেছে

অসীম দূরে, অজানা কোথাও ।


আর একাকী মন উড়ে যেতেই থাকে

অসীম নির্জনে ।

পালকগুলো -সাদাকালো, পড়তেই থাকে

নিচে, অনেক নিচে

শূন্যে, মহাশূন্যে ।


২১-ফেব্রুয়ারী-২০০৪

উচ্ছৃঙ্খল কিশোর


ছুটে চলেছে এক কিশোর- পৃথিবীকে উপহাস করে
,

অট্টহাসিতে চারদিক কাঁপিয়ে,

শেকড় গজানো অসাড় মানুষগুলোকে তীব্র ভ্রুকুটি হেনে-

ছুটে চলেছে দোজখের আগুনে ।


দূরে বসে থেকে বড় বড় চোখ মেলে

তাকে দেখছে বোকা আজরাঈল ।

শান্তির দূত জিব্রাইল কান ফাটিয়ে চেঁচাচ্ছে-

ফিরে এসো অবোধ কিশোর, শান্ত হও


কিশোর তাকে ভেংচি কাটে-

ঐ শান্তির কথা মুখে এনো না,

শান্তির সুবাতাসে আজ মায়ের ক্যান্সার,

শান্তির আগুনে পিছলে গিয়ে

ভাইটি মোর অচল অসাড়-

শান্তির ঐ ঝকঝকে মোড়কটা এখনই খুলে ফেল,

নইলে তোমার মুখে আমি অশান্তির এসিড ছুঁড়ব

বুঝবে তখন কত যুদ্ধে কত শান্তি”


কিশোরের রক্তলাল লোচন থেকে

বেরুচ্ছে দোজখের আগুনের বিষাক্ত কালো ধোঁয়া

কিশোরের সর্বাঙ্গে এখন আগুন-

দোজখের আগুন,

কিন্তু তার মুখে উপহাসে দ্রবীভূত গাঢ় হাসি

সে হাসির দমকে পৃথিবী কাঁপছে থরথর করে ।


প্রশ্নমাখা বোবা দৃষ্টি মেলে সর্বগ্রাসী ঈশ্বর দেখছে-

উচ্ছৃঙ্খল কিশোরটিকে ।


৩১-০৭-২০০৩

Friday, April 4, 2008

খুব বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে


খুব বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে
যখন বুড়া রহিমুদ্দিন অশক্ত হাত দুটো
পিঠে বুলিয়ে দোয়া করে -ভাল থাক সুখে থাক বড় হও ।
যখন পাশের বাড়ীর বুড়ী চাচী
একবাটি ঝাল সালুন পাঠিয়ে দেয়
অসীম মমতা মেখে ।
যখন জীবন যুদ্ধে পরাভূত
কৃষ্ণকায় ছোটখাট গাঁয়ের বধূটি
হেসে ফেলে- মাথায় আঁচল তোলে
বসতে বলে বাঁশের ভাঙ্গা চৌকিতে ।

খুব বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে
যখন চায়ের কাপে ধোঁয়া ওঠে
গরম চা খেয়ে জিহবা পুড়ে যায়,
যখন চশমাটা হারিয়ে যায়
হাতড়ে হাতড়ে খুঁজে বের করি অন্ধের মত ।
যখন ছোট বোনটি বায়না ধরে,
ঝগড়া করে কেঁদে ফেলে
পাঁচ টাকার একটি কয়েনের জন্য ।
যখন প্রচণ্ড জ্বরে গা পুড়ে যায়,
মায়ের মত কেউ এসে কপালে হাত রাখে ।
যখন দেরি করে ঘরে ফেরায়
বকুনি খেতে হয় একজন মমতাময়ীর ।

খুব বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে
যখন সোডিয়াম বাতির হলুদ আলোয়
হেঁটে যাই পিচ ঢালা রাজপথে ।
যখন দশ টাকার চকচকে নোট পেয়ে
হাড় জিড়জিড়ে ছোট্ট টোকাইটি হেসে ওঠে
গভীর আনন্দ বিস্ময় আর প্রশান্তিতে ।

খুব বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে
যখন আকাশে হঠাৎ মেঘেরা ভীড় জমায়
অশ্রু হয়ে ঝরে পরে পৃথিবীর বুকে ।
যখন সন্ধ্যাটা হঠাৎ বিষণ্ন হয়ে যায়-
মনে পড়ে ফেলে আসা দিনগুলোকে ।
যখন রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে যায়
উদাসী পথিকের ভাটিয়ালি সুরে ।

আমার খুব বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে
যখন এক পবিত্র কিশোরী আমাকে স্পর্শ করে
কাঁধে হাত রাখে
জানায়, সে আছে আজীবন আমার পাশে ।।

০১-ফেব্রুয়ারী-০৫